ডলারের বাড়তি দামের কারণে সিমেন্টশিল্পের ঋণের খরচ ২০ শতাংশের বেশি বেড়ে গেছে। তাতে চলতি মূলধনের সংকটে পড়েছে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। সিমেন্টশিল্পের মালিকেরা বলছেন, বছরের শুরুতে কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৬–৮৭ টাকা। সেই হিসাব ধরে পণ্যও বিক্রি করা হয়েছে। এখন আমদানি দায় পরিশোধে প্রতি ডলারের দাম পরিশোধ করতে হচ্ছে ১০৬–১১২ টাকা। এতে ব্যাংকঋণের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ বাড়তি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে।
সিমেন্ট খাতের চলমান সংকট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ শিল্পের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট প্রস্তুতকারক সমিতির (বিসিএমএ) নেতারা এসব কথা বলেন। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে আর্থিক ক্ষতি পোষাতে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রণোদনার পাশাপাশি সিমেন্টের কাঁচামাল চুনাপাথর আমদানিতে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার ও অগ্রিম আয়কর কমানোর দাবি জানানো হয়েছে।
সিমেন্টশিল্পের মালিকেরা বলেন, মূলধন–সংকট মোকাবিলায় বাড়তি ঋণ নেওয়ার পাশাপাশি কাঁচামালের ঋণপত্র খুলতেও সমস্যা হচ্ছে। সব মিলিয়ে আর্থিকভাবে সিমেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানগুলো চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিসিএমএ সভাপতি মো. আলমগীর কবির। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিএমএর সহসভাপতি মো. শহিদুল্লাহ, নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আমিরুল হকসহ বেশ কয়েকটি সিমেন্ট কারখানার প্রতিনিধিরা।
বিসিএমএ সভাপতি মো. আলমগীর কবির বলেন, ‘বর্তমানে নতুন ঋণপত্র খুলতে গিয়ে আমাদের অনেক বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। আবার ছোট ছোট উৎপাদনকারীরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও ঋণপত্র খুলতে পারছেন না।
চুনাপাথরের সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার দাবি
ব্যবসায়ীরা জানান, সিমেন্টশিল্পের কাঁচামাল চুনাপাথর আমদানির ক্ষেত্রে সম্প্রতি ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে আমদানিতে অগ্রিম কর ২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। এতে সিমেন্টশিল্প চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাই সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে। পাশাপাশি আমদানি ও বিক্রয় পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর সর্বোচ্চ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানান সিমেন্টশিল্পের মালিকেরা।
এ বিষয়ে আলমগীর কবির বলেন, হঠাৎ করেই চুনাপাথর আমদানিতে ৩০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এতে চুনাপাথর ছাড় করতে বর্তমানে ৬৭ শতাংশ শুল্ক ও কর পরিশোধ করতে হচ্ছে; আগে যা ছিল ২৭ শতাংশ। এ ছাড়া অগ্রিম আয়কর বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
কমছে উৎপাদন
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানাগুলোতে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে গ্যাস–সংকটের কারণে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারছেন না তাঁরা। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে সিমেন্টের পরিবহন খরচও বেড়ে যাচ্ছে। এতে শেষ পর্যন্ত ভোক্তা পর্যায়ে প্রভাব পড়তে পারে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।