অনুমোদন ছাড়া বা শর্ত ভেঙে নির্মাণ করা ভবন জরিমানার মাধ্যমে বৈধ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য জরিমানার মাধ্যমে অবৈধ ভবন বৈধ করার প্রক্রিয়া নির্ধারণে একটি নীতিমালা করা হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি এ বিষয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে, যার প্রধান একজন অতিরিক্ত সচিব। নতুন বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপের (২০২২-২০৩৫) সুপারিশ অনুযায়ী এ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, যথাযথ নিয়ম না মেনে ভবন নির্মাণের কারণে ভূমিকম্পে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে তুরস্ক। ভয়াবহ এ প্রাকৃতিক দুর্যোগে এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ৪৫ হাজার ছাড়িয়েছে। তুরস্কেও জরিমানার মাধ্যমে বৈধ করা হয় নিয়ম না মেনে তৈরি করা হাজার হাজার ভবন।
বিগত কয়েক বছর ধরে ছোট ছোট ভূমিকম্প হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সতর্ক করে আসছেন গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা। এ পরিস্থিতিতে অবৈধ ভবন বৈধ করার মাধ্যমে বাংলাদেশও তুরস্কের পথে হাঁটছে কি না- তা ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করছেন নগর বিশেষজ্ঞরা।
তবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঢাকায় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভবনই নিয়ম না মেনে তৈরি করা। ফলে এসব ভবন যতই ঝুঁকি তৈরি করুক, অবৈধ হিসেবে এত বিপুল সংখ্যক ভবন ভেঙে ফেলা বাংলাদেশের মতো দেশের পক্ষে সম্ভব নয়। তাই জরিমানা ও সংস্কারের মাধ্যমে অবৈধ ভবনগুলোকে যতটা সম্ভব ঝুঁকিমুক্ত করা ছাড়া উপায় নেই। ভারতসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটা স্বীকৃত বলেও জানান তারা।
নতুন ড্যাপে এ বিষয়ে রূপরেখা দেওয়া হয়েছে। তবে জরিমানার মাধ্যমে অবৈধ ভবন বৈধ করার বিষয়টি অনেক বড় সিদ্ধান্ত। সরকারের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে হবে।
নগর বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের বস্তবতা অনুযায়ী এত বিপুল সংখ্যক অবৈধ ভবন ভেঙে ফেলা সম্ভব নয়। কিন্তু কোন প্রক্রিয়ায় এটি বৈধ করা হচ্ছে, সেটি সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট হতে হবে। দুর্নীতি কিংবা যেনতেনভাবে কিছু করা হলে সামনে বড় ধরনের বিপর্যয় অপেক্ষা করছে।
অবৈধ ভবন বৈধ করতে গত ৩১ জানুয়ারি ১২ সদস্যের কমিটি গঠন করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এতে আহ্বায়ক করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন অনুবিভাগ-১)।
এতে বলা হয়, ঢাকা মহানগর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (২০২২-২০৩৫) সুপারিশ অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বা শর্তাবলি ভঙ্গ করে নির্মিত ইমারতসমূহ বৈধ করার ক্ষেত্রে একটি খসড়া বিধিমালা প্রণয়নে ১২ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন- রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা), সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ), বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের (আইএবি) সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্লানার্সের (বিআইপি) সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক, রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী (বাস্তবায়ন), গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব (পরিকল্পনা শাখা-৩), রাজউকের নগর স্থপতি, রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ (বাস্তবায়ন) ও রাজউকের ঢাকা অথরাজইড অফিসার (সংশ্লিষ্ট জোন)। কমিটিতে সদস্য সচিব থাকছেন রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ (পরিকল্পনা প্রণয়ন)।
কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বা অনুমোদনের সময় দেওয়া শর্ত ভঙ্গ করে নির্মিত ইমারত বৈধ করার আবেদন পদ্ধতি, ফি ও জরিমানা নির্ধারণ পদ্ধতি সংক্রান্ত খসড়া বিধিমালা প্রণয়ন করবে এ কমিটি।
একই সঙ্গে কমিটি ‘ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৮ (ইমারত বিধিমালা)’ অনুযায়ী যেসব স্থাপনা অননুমোদিত বা বিধিমালার বা অনুমোদনের শর্তাবলির ব্যত্যয় করে নির্মিত হয়েছে, সেই ব্যত্যয়কৃত অংশের সরেজমিনে পরিদর্শন করবে। এরপর এ বিষয়ে বিদ্যমান ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০০৮’ এবং বিএনবিসি কোড পর্যালোচনা করে একটি প্রতিবেদন প্রণয়ন করবে।
কমিটির প্রণয়ন করা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে উপস্থাপন করতে হবে। কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপনে এমন তথ্য জানানো হয়েছে।
রাজউকের সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক ভবন নির্মাণে নকশা নেওয়া হয়নি কিংবা অনুমোদন নেয়নি, কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ভবন ঠিক আছে। সেক্ষেত্রে জরিমানা দিয়ে ওইসব ভবন বৈধ করে নেওয়ার সুযোগ থাকছে। পাশাপাশি ভবন নির্মাণে কতটুকু বিচ্যুতি গ্রহণযোগ্য- এ বিষয়ে আমাদের উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি আছে। সেখানে নগর পরিকল্পনাবিদরা রয়েছেন। এছাড়া ড্যাপ বাস্তবায়নে একটা বিধিমালাও করা হচ্ছে।’
রাজউকের নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আশরাফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো ভবন নির্মাণে হয়তো রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি, তবে অবকাঠামোগত নিরাপত্তার ভেরিফিকেশন ঠিক আছে। তাহলে এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনে ১০ গুণ জরিমানার বিধান রয়েছে। এ ক্ষেত্রেই কেবল ড্যাপে যে প্রস্তাব রয়েছে সেই অনুযায়ী সুবিধা পাবে। এ বিষয়টি ইমারত নির্মাণ আইনেও রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তবে কোন পদ্ধতিতে এ কাজটি আমরা করবো, সেটা নিয়ে একটা নীতিমালা করার কথা রয়েছে।’
‘ঢাকার উপ-শহর এলাকায় যেমন- কেরানীগঞ্জ, সাভার ও গাজীপুরের বেশিরভাগ ভবনই অনুমোদনহীন। ওইসব এলাকার হয়তো ৫ থেকে ১০ শতাংশ ভবনের অনুমোদন আছে। বাকি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ ভবনেরই অনুমোদন নেই।’
আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা মহানগরে এফআর টাওয়ার দুর্ঘটনার পর উচ্চতা নিয়ে একটা সার্ভে করা হয়েছিল। তখন এক হাজার ৮১৮টি অবৈধ ভবন পাওয়া যায়।’
‘ভারতের মুম্বাইসহ বিভিন্ন জায়গায় এই (জরিমানার মাধ্যমে অবৈধ ভবন বৈধ করা) প্র্যাকটিস আছে। বিএনবিসি (বাংলাদেশ জাতীয় বিল্ডিং কোড) অনুযায়ী যদি অবকাঠামোগতভাবে ভবন নিরাপদ হয়, তখন তারা জরিমানা দিয়ে বৈধতা পাবে। যদি সেই সার্টিফিকেশন কেউ দেয় তখন এটা হবে’, বলেন এ নগর পরিকল্পনাবিদ।
তবে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘রাজউকের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে এ কমিটি করা হয়েছে। এটি সঠিক হয়নি। এটি বাতিল হবে। প্রতিমন্ত্রী (গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ) বিদেশ থেকে ফিরলে এটা নিয়ে বৈঠক হবে। আশা করছি আগামী সপ্তাহের (এ সপ্তাহে) আমরা বৈঠক করতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘অনেক বিষয় স্পষ্ট নয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর নেতৃত্বে ড্যাপ রিভিউ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি রয়েছে। সেই কমিটি এখনও বহাল আছে কি-না। কারণ ওই কমিটি আগের ড্যাপ পর্যালোচনার জন্য করা হয়েছিল। নতুন ড্যাপের গেজেট হওয়ার পর ওই কমিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার কথা। যদি ওই কমিটি বহাল থাকে তবে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত সেখান থেকে আসতে হবে।’
‘এছাড়া এটি এত বড় একটি নীতি-নির্ধারণী সিদ্ধান্ত যে, অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ে এ বিষয়ে কমিটি হতে পারে না। এক্ষেত্রে আরও উচ্চ পর্যায়ের কমিটি প্রয়োজন। প্রতিমন্ত্রী ফিরলেই এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’, যোগ করেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন অনুবিভাগ-১) ও কমিটির আহ্বায়ক মো. অলিউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কমিটি কাজ শুরু করেনি। সার্বিক বিষয় দেখেশুনে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত পরে জানানো যাবে।’
নগর ও পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব জাগো নিউজকে বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত নীতিমালা না হয়, এ বিষয়ে মন্তব্য করা মুশকিল। এরই মধ্যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তুরস্কে যেসব ভবন এভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল, ভূমিকম্পে সেসব ভবন ভেঙে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘অননুমোদিত ভবনের কয়েকটি প্রকারভেদ আছে। ড্যাপে সে বিষয়ে ইঙ্গিত আছে। এ সংক্রান্ত বিস্তারিত বিষয় আশা করি নীতিমালায় থাকবে। দেখা যাচ্ছে অনেক বাড়ি নিয়মমতো কারিগরিভাবে দক্ষ লোকের মাধ্যমে তৈরি করেছে, কিন্তু অবৈধভাবে বারান্দা বের করেছে, চারিদিকে অতিরিক্ত সম্প্রসারণ করেছে। সেগুলোকে জরিমানার মাধ্যমে তাদের আগের অবস্থায় (মূল নকশা অনুযায়ী) ফিরিয়ে বৈধ করা যাবে।’
স্থপতি ইকবাল হাবিব আরও বলেন, ‘কোনো কোনো মালিক হয়তো প্রক্রিয়া (নকশা অনুমোদনসহ অন্যান্য বিষয়) অনুসরণ করেননি, কিন্তু নিয়মমতো ভবন বানিয়েছেন। তাকেও অতিরিক্ত হারে জরিমানা দিয়ে প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বৈধ করা যেতে পারে।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক ইকবাল হাবিব বলেন, ‘অনেক ভবন কারিগরিভাবে দক্ষ বা রাজউকের তালিকাভুক্ত লোক দিয়ে করা হয়নি। আবার পরীক্ষা করেও যদি দেখা যায় এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। এসব ভবন শনাক্তে আরবান রেজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় রাজউক এরই মধ্যে যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করেছে। পরীক্ষা করে যদি কাঠামোগত ত্রুটি পাওয়া যায় বা এমন ব্যত্যয় পাওয়া গেলো যা সংশোধন করা যাবে না। তাহলে সেগুলোর ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় আছে। প্রথমত, ওইসব ভবন পুনরায় দৃঢ়করণ (রিস্ট্রেংদেনিং) করতে হবে অর্থাৎ এগুলো শক্তিশালী করতে হবে, যাতে অভিঘাত মোকাবিলার জন্য বিএনবিসির শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয়। দ্বিতীয়ত, ওইসব ভবন মালিকদের বিপুল পরিমাণ জরিমানাও দিতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যেগুলো একেবারেই ঝুঁকিপূর্ণ সেইসব ভবন জরিমানা দিয়েও বৈধ করা যাবে না। ড্যাপে এ ইঙ্গিতগুলো আছে।’
নীতিমালায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত থাকতে হবে জানিয়ে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের এ সদস্য বলেন, ‘কোন কমিটি পরীক্ষা-নীরিক্ষা করবে? কমিটি পরীক্ষা করে বললো হবে না, সেক্ষেত্রে কোথায় আপিল করা যাবে? আপিলের পর পরীক্ষাটা কীভাবে হবে, সেটা আবার ভেটিং করবে কে- কোনো কিছুই পরিষ্কার নয়। এগুলো বিস্তারিত থাকতে হবে নীতিমালায়। সে অনুযায়ী এগোতে হবে।’
ইকবাল হাবিব আরও বলেন, ‘দৃষ্টিভঙ্গিগতভাবে এটা সত্য যে ঢালাওভাবে অধিকাংশ, রাজউকের ভাষায় ৯০ শতাংশ ভবনই অবৈধ। সেগুলো সব ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। তাহলে একটা প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে সেগুলোকে বিপদমুক্ত অথবা কমপ্ল্যায়েন্স করা সাপেক্ষেই কেবল অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে।’
সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ ছাড়া ঢালাওভাবে এটা করার কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে বাপার যুগ্ম সম্পাদক বলেন, ‘রাজউকের এখন পর্যন্ত যে সক্ষমতা, এখন পর্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন যে ভাবমূর্তি এবং লোকবল- তা দিয়ে এ কাজ করা প্রায় অসম্ভব। এ রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে রাজউকের লোকবল ও তদারকির অভাবে। এ পরিস্থিতি যার (রাজউক) কারণে হয়েছে তাকে দিয়ে আবার এত কঠিন কর্মযজ্ঞ করাবেন, সেটা প্রায় অসম্ভব।’
‘তাই আমি বলবো, বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে বিল্ডিং রেগুলেটরি অথরিটি (বিআরএ) করার কথা বলা আছে। যারা বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড দেখবে। এ রকম সংস্থা দিয়েই কেবল এ ধরনের কাজ করা উচিত বলে আমি মনে করি’, বলেন ইকবাল হাবিব।
যেসব সুপারিশ করা হয়েছে ড্যাপে
গত বছরের ২২ আগস্ট নতুন ড্যাপের গেজেট প্রকাশিত হয়। ড্যাপের ‘অনুমোদনবিহীন ইমারত ব্যবস্থাপনা’ অংশে বলা হয়, ঢাকা মহানগরীর বিপুলসংখ্যক স্থাপনা/ইমারত কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বা অনুমোদন সত্ত্বেও অনুমোদনের শর্তাবলি লঙ্ঘন করে নির্মিত হয়েছে।
ড্যাপের অধীনে ভৌত জরিপে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, আওতাভুক্ত এলাকায় বিদ্যমান সর্বমোট স্থাপনার সংখ্যা ২১ লাখ ৪৫ হাজার ৭৪৬টি। ‘নগর উন্নয়ন আইন, ১৯৫৩’ অনুযায়ী এসব এলাকায় যেকোনো ধরনের ইমারত নির্মাণ করতে গেলে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।
বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৬ থেকে ২০১৬ সালে স্থাপনার সংখ্যা বেড়েছে ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৩৩০টি। অর্থাৎ গড়ে প্রতিবছর প্রায় ৯৫ হাজার নতুন স্থাপনা নির্মিত হয়েছে। অন্যদিকে সাম্প্রতিক তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গড়ে প্রতিবছর স্থাপনা নকশা অনুমোদনের হার প্রায় ৪ হাজার ১৭৫ (সূত্র- রাজউক বার্ষিক রিপোর্ট, ২০১৪-২০১৫, ২০১৫-২০১৬ ও ২০১৬-২০১৭)। অর্থাৎ গড়ে মাত্র ৪ দশমিক ৪ শতাংশ স্থাপনা রাজউক থেকে অনুমোদন নিয়ে বৈধভাবে নির্মিত।
‘ঢাকা মহানগর ইমারত (নির্মাণ, উন্নয়ন, সংরক্ষণ ও অপসারণ) বিধিমালা, ২০০৮’ (ইমারত বিধিমালা) অনুযায়ী যেসব স্থাপনা অননুমোদিত অথবা বিধিমালার বা অনুমোদনের শর্তাবলির ব্যত্যয় করে নির্মিত হয়েছে, সেগুলো অপসারণের বিধান রয়েছে। অর্থাৎ বর্তমান আইন অনুযায়ী বিধিমালার কোনো ধরনের ব্যত্যয় বহাল রেখে জরিমানার মাধ্যমে স্থাপনা বৈধ করার সুযোগ নেই। এসব তথ্য থেকে অনুধাবন করা যায় যে, সমস্যার ব্যাপকতার মাত্রা এমন যে অবৈধ স্থাপনা/অংশ অপসারণের উদ্যোগ শহরজুড়ে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে। অপরদিকে যেকোনো ধরনের ব্যত্যয় শুধুমাত্র জরিমানার বিনিময়ে বৈধ করার আইনের প্রয়োগও শহরের বাসযোগ্যতার দৃষ্টিকোণ থেকে হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। এর ফলে অবৈধভাবে ভবন নির্মাণ উৎসাহিত হতে পারে বলেও ড্যাপে বলা হয়।
ইমারত ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত নীতিমালা করার সুপারিশ করে ড্যাপে বলা হয়, অনুমোদনহীন ইমারত নির্মাণে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ইমারতের ব্যত্যয়ের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায় করতে পারে। এক্ষেতে ক্ষেত্রবিশেষে ইমারতে প্রয়োজনীয় কাঠামোগত সংশোধন/অপসারণ/ পরিবর্তন সাপেক্ষে অনুমোদনহীন ইমারতের বৈধতা দেওয়া যেতে পারে।
এ সংক্রান্ত পরিকল্পনায় একটি নির্দিষ্ট মূল্যায়ন কমিটির সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে জরিমানার প্রস্তাবিত বিধান প্রয়োগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে ড্যাপে।
তবে কিছুক্ষেত্রে জরিমানা দিয়েও স্থাপনার বৈধতা পাওয়া যাবে না। এগুলো হলো- মহাপরিকল্পনার ব্যত্যয় ঘটিয়ে, জনসম্পত্তি দখল করে, জলাশয় ভরাট করে, সিভিল এভিয়েশনের নির্ধারিত উচ্চতার সীমা লঙ্ঘন, জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক ও রেললাইনের অংশ দখল করে ভবন নির্মাণ করলে। জাগোনিউজ২৪