আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com
৯ জেলায় ভূমি ও গৃহহীন থাকছে না কেউ

দেশের আরও সাত জেলা আজ গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত হচ্ছে। এর আগে দেশের প্রথম জেলা হিসেবে পঞ্চগড় ও মাগুরা জেলাকে ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ এসব জেলায় ঘর কিংবা জমি ছাড়া কেউ বসবাস করছে না।

‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকার, দেশের কোনও মানুষ ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না’ লক্ষ্যে বুধবার (২২ মার্চ) গণভবন থেকে সকাল সাড়ে ১০টায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে দেশের তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর হস্তান্তর করার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় আরও ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর হস্তান্তর করবেন তিনি। এর মাধ্যমে দেশের ৯টি জেলা ও ২১১টি উপজেলা ভূমিহীন ও গৃহহীনমুক্ত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের মাদারীপুর, গাজীপুর, নরসিংদী, রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সব উপজেলা গৃহহীনমুক্ত হবে ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে দেশের তিনটি উপজেলায় যুক্ত হয়ে চতুর্থ পর্যায়ের ঘর ও জমি হস্তান্তর করবেন। এদিন গাজীপুরে শ্রীপুর উপজেলায় নয়াপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প, সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার নওয়াগাঁও আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং বরিশালের বানারীপাড়ার উত্তরপাড় আশ্রয়ণ প্রকল্পে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে উপকারভোগীদের সঙ্গে কথা বলবেন।

১৯৯৭ সালে ভূমিহীন-গৃহহীনকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ‘আশ্রয়ণ’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে, যা প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে আসছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিব বর্ষে প্রথম পর্যায়ে ২০২১ সালের ২৩ জানুয়ারি ৬০ হাজার ১৯১টি ঘর ও ২০ জুন ৫৩ হাজার ৩০০টি ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে মোট নির্মিত ঘরের সংখ্যা ১ লাখ ১৭ হাজার ২৯।

এখন পর্যন্ত এই প্রকল্পের আওতায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৫৯৭টি পরিবারকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। আশ্রয়ণ ও অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা সংস্থাসহ ঘর নির্মাণ করে ১৯৯৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত পুনর্বাসন করা হয়েছে ৭ লাখ ৭১ লাখ ৩০১টি পরিবারকে। প্রতি পরিবারের পাঁচ জন সদস্য হিসাবে দেশে মোট উপকারভোগীর সংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৬ হাজার ৫০৫।

তৃতীয় পর্যায়ে নির্মাণ করা একক ঘরের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৬৭৪। এর মধ্যে ৩২ হাজার ৯০৪টি হস্তান্তর হয়েছে গত বছরের ২৬ এপ্রিল এবং দ্বিতীয় ধাপে ২১ জুলাই জমির মালিকানাসহ ২৬ হাজার ২২৯টি হস্তান্তর করা হয়। বুধবার চতুর্থ পর্যায়ে হস্তান্তর হচ্ছে ৩৯ হাজার ৩৬৫টি ঘর।

প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যায়সহ মোট হস্তান্তরিত একক ঘরের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার ৮২৭টি। চতুর্থ পর্যায়ে অবশিষ্ট নির্মাণাধীন ঘরের সংখ্যা ২২ হাজার ৬টি। চতুর্থ পর্যায়ে চরাঞ্চলে বরাদ্দ করা বিশেষ ডিজাইনের ঘরের সংখ্যা ১ হাজার ৩৭৩টি এবং পার্বত্যাঞ্চলের বিশেষ ডিজাইনের মাচাং ঘর ৬৩৪টি।

এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, স্বামী-স্ত্রীর যৌথ মালিকানায় ২ শতাংশ জমি দলিল ও নামজারি করে দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর হস্তান্তর করা হচ্ছে। তারা এই জমির পুরোপুরি মালিকানা পাচ্ছেন। তবে শর্তানুসারে তারা জমি হস্তান্তর করতে বা বন্ধক দিতে পারবেন না। ভবিষ্যতে ঘর সংস্কারের প্রয়োজন হলে মালিকানা হিসেবে তারাই সেটা করবেন।

তোফাজ্জল হোসেন আরও বলেন, বুধবার ঘর হস্তান্তরের পর দেশে ভূমিহীন-গৃহহীনমুক্ত জেলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৯-এ এবং উপজেলার সংখ্যা হবে ২১১টি।

তিনি আরও বলেন, এই জেলা ও উপজেলাগুলোতে নদীভাঙন, প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা অন্য কোনও কারণে কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন হয়ে পড়লে সেসব পরিবারকে চিহ্নিত করে জমির মালিকানাসহ ঘর দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, গাজীপুরের নয়াপাড়া গ্রামের এ কর্মসূচি আমাদের বিরাট অর্জন। স্বাধীনতার এত বছর পর প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে আশ্রয়হীনদের মধ্যে ঘর বিতরণ করছি, এটা খুবই আনন্দের বিষয়। এখানে বহু মানুষ বসবাস করবে। তারা শুধু আশ্রয় পাবে না, প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে তারা দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হবে।

জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এ পর্যন্ত গাজীপুর জেলায় ১ হাজার ৮১৭ জন গৃহহীন পরিবারের মধ্যে আমরা সফলভাবে ঘর বিতরণ করেছি। ২২ মার্চ গাজীপুরকে গৃহহীনমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী।