দাম বেড়েছে ফ্ল্যাট-প্লটের। তাই মধ্যবিত্ত শ্রেণির অনেকের পক্ষে দামের সবটা গুছিয়ে একবারে কেনা সম্ভব হয় না। এসব ক্রেতার কথা বিবেচনায় রেখে এবার আবাসন মেলায় মূল্যছাড়সহ ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা থাকছে বলে মেলার আয়োজকরা এমন কথা জানিয়েছেন। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) এই মেলা শুরু হচ্ছে।
আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, আমাদের দেশের বেশির ভাগ মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতা ফ্ল্যাট বা প্লটের মোট মূল্য একসঙ্গে জোগাড় করতে পারেন না। অনেকে ব্যাংকঋণও জোগাড় করতে পারেন না। অনেকে ব্যস্ততার কারণে বিভিন্ন কোম্পানিতে গিয়ে যাচাই-বাছাই ও দরদাম করে কিনতে পারেন না। এসব ক্রেতা এবারের আবাসন মেলায় ছাড়ের কারণে সহজে যাচাই-বাছাই করে ফ্ল্যাট-প্লট কিনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে মূল্যছাড়সহ বিভিন্ন উপহারসামগ্রী দেওয়া হবে। ক্রেতাপ্রতিষ্ঠান বিক্রেতার জন্য ব্যাংকঋণ পেতে সহযোগিতা করবেন।
রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, অনেকে একটু খোলামেলা পরিবেশে ফ্ল্যাট ও প্লট কিনতে চান। অনেকে বড় পরিসরে আভিজাত্যপূর্ণ এলাকায় কিনতে চান। এসব ক্রেতার জন্যও এবারের মেলায় সুযোগ থাকছে।
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার অন্যতম হলো বাসস্থান। প্রত্যেক মানুষের যথোপযুক্ত বাসস্থান পাওয়ার অধিকার জাতিসংঘের ঘোষণা থেকে প্রমাণিত। আমাদের সংবিধানও বাসস্থানকে মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সব মানুষের স্বপ্ন থাকে সুন্দর একটা বাড়ি করার। সারা দিনের ক্লান্তি শেষে ঘরে ফিরে সবাই চায় একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত সবারই ন্যূনতম চাওয়া একটা সুন্দর নিজস্ব ঠিকানা। নিজের একটা ঠিকানা শুধু না। নিজের একটা বাসস্থান মানুষের স্থিতিশীলতা, আত্মমর্যাদা এবং ব্যক্তিত্বকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। আবাসনশিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাই সচেষ্ট দেশের নাগরিকদের নিজস্ব একটা ঠিকানা তৈরি করে দেওয়ার জন্য। এসব ধারণা সামনে রেখে এবারের মেলা আয়োজন করা হয়েছে।
করোনার সময় থেকেই ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বাড়তে থাকে। দেশের অর্থনীতি সে সময়ে স্থবির হয়ে পড়ে। অনেক ব্যবসায়ী পুঁজির সবটা বিনিয়োগ করে ফ্ল্যাট বানিয়েও ক্রেতার অভাবে বিক্রি করতে পারেন না। এ সময় আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় ফ্ল্যাট নির্মাণের খরচও বাড়তে থাকে। এতে ফ্ল্যাটের দামও বাড়ে। করোনা শেষে আবাসন খাত ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হয়। ডলারসংকটে নির্মাণসামগ্রীর দাম আবারও বাড়তে থাকে। ফ্ল্যাটের দাম আরও বাড়ে। সাধারণ আয়ের ক্রেতাদের পক্ষে ফ্ল্যাট কেনা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। এসব ক্রেতা এবারের আবাসন মেলায় কম দামে ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
রায়হান সামাদ পেশায় একজন ব্যাংকার। স্ত্রী গৃহিণী। রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। স্বামী-স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে চারজনের সংসার তাদের। রায়হান সামাদ ও তার স্ত্রীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটের মালিক হওয়ার। কিন্তু ফ্ল্যাটের যে দাম আর তার যে আয়, তা দিয়ে ফ্ল্যাট কেনা সম্ভব নয়। রায়হান সামাদ খবরের কাগজকে বলেন, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জেনেছি এবারের আবাসন মেলায় ব্যাপক ছাড় থাকবে। আশা করছি, ছাড় নিয়ে মেলা থেকে একটি ফ্ল্যাট কিনতে পারব।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রিফাত আল শামসুজ্জামান খবরের কাগজকে বলেন, ‘অনেক দিন থেকে ফ্ল্যাট কিনতে চাই। কিন্তু দামের কারণে পারিনি। জেনেছি এবারের মেলায় মূল্যছাড় থাকবে এবং ব্যাংকঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। আমি গ্রামের জমি বিক্রি করেছি। আমি ও আমার স্ত্রী সিদ্ধান্ত নিয়েছি মূল্যছাড়ের সুবিধা নিয়ে এবারের আবাসন মেলা থেকে একটি ছোট আকারের ফ্ল্যাট কিনব। ডাউন পেমেন্ট দেব। পরে কিস্তিতে বাকি অর্থ পরিশোধ করব।
রিহ্যাবের পরিচালক মুহসিন মিয়া খবরের কাগজকে বলেন, এবারের আবাসন মেলায় ফ্ল্যাট-প্লট কেনার পাশাপাশি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল কেনার সুযোগ থাকবে। এ ছাড়া অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানও মেলায় থাকবে। কোনো ক্রেতা এসব বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে কম দামে কিনতে পারবেন। আবার ঋণও নিতে পারবেন।
রাজধানীর আগারগাঁও বিআইসিসিতে শুরু হওয়া এবারের আবাসন মেলা ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলার কথা আছে।
২০০১ সালে ঢাকায় রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার শুরু হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ১৫টি মেলা করেছে রিহ্যাব। রিহ্যাব ২০০৪ সাল থেকে বিদেশে হাউজিং ফেয়ার আয়োজন করে আসছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ১২টি, যুক্তরাজ্য, দুবাই, ইতালির রোম, কানাডা, সিডনি ও কাতারে একটি করে এবং দুবাইয়ে দুটি ‘রিহ্যাব হাউজিং ফেয়ার করেছে। এসব ফেয়ার আয়োজনের ফলে দেশ-বিদেশে বাংলাদেশের গৃহায়ণশিল্পের বাজার বাড়ছে। প্রবাসী ক্রেতারা সহজে দেশে তাদের পছন্দের আবাসন বেছে নিতে পারছেন। এর ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আসছে দেশে।
রিহ্যাব সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এবারের ফেয়ারে ২২০টি স্টল থাকছে। ৫টি গোল্ড স্পন্সর, ১৮টি কো-স্পন্সর, ১৮টি বিল্ডিং ম্যাটেরিয়াল ও ১০টি অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানকে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ক্রেতা-দর্শনার্থী মেলায় ঢুকতে পারবেন। সিঙ্গেল এন্ট্রি টিকিটের প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা। আর মাল্টিপল-এন্ট্রি টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা। মাল্টিপল-এন্ট্রি টিকিট দিয়ে একজন দর্শনার্থী কমপক্ষে পাঁচবার প্রবেশ করতে পারবেন। টিকিটের সম্পূর্ণ অর্থ দুস্থদের জন্য করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর) কাজে ব্যয় করা হবে। টিকিটের র্যাফেল ড্রতে থাকছে আকর্ষণীয় পুরস্কার।
আবাসন ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান আছে। প্রায় ১০ হাজার শিল্পপ্রতিষ্ঠান জড়িত। এবারের মেলার মাধ্যমে অনেক ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রি হবে বলে আশা করছেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। খবরের কাগজ