
ঢাকাকে বাসযোগ্য নগর হিসেবে গড়ে তুলতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) নতুন ডিটেইল্ড এরিয়া প্ল্যান বা বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা তৈরি করেছে, যা ‘ড্যাপ’ নামে পরিচিত। গত বছরের আগস্ট থেকে এটি কার্যকর করা হয়। ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের ১ হাজার ৫২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে এই মহাপরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু শুরু থেকে ড্যাপ (২০২২-৩৫) নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা চলছে। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) নেতারা বলেছেন, নতুন ড্যাপ বৈষম্যমূলক এবং অস্পষ্ট। বর্তমানে আবাসনশিল্পে যে সংকট চলছে তাতে প্রধান সমস্যা এই ড্যাপ। এটি আবাসন খাতের জন্য মরণফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ড্যাপ’ এর কারণে দেশের অর্থনীতি ঝুঁকির মুখে পড়েছে। ড্যাপ এর কারণে আবাসন খাত সংশ্লিষ্ট লিংকেজ শিল্পগুলোকে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। গত ২ বছর ধরে নকশা অনুমোদন কমে গেছে এবং আবাসন খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছে। ফলে খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে বেকার হয়েছে লক্ষাধিক চাকরিজীবী। ভবনের কম আয়তন এবং উচ্চতা কম হওয়ার গত ৫ মাস ধরে আবাসন ব্যবসায়ী ও জমির ক্ষতিগ্রস্ত মালিকরা ইমারত নির্মাণ বন্ধ রেখেছে। অর্থনীতিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখা এই খাতে রড-সিমেন্টের চাহিদা কমায় উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। এর ফলে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার আশংকা করছেন অনেকে। যদি ড্যাপ সংশোধন করে বাস্তবায়ন না করা হয় তবে অর্থনীতি আরো ঝুঁকির মুখে পড়বে।
ড্যাপে শহরের বাসযোগ্যতা, ধারণক্ষমতা, নাগরিক সুবিধাদি, পরিবেশ ইত্যাদি বিষয় গুরুত্ব না পেয়ে বরং, নির্দিষ্ট কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় এমনটি করা হয়েছে। তারা ড্যাপ সংশোধনের দাবি জানিয়ে বলেন, এটি সংশোধন না করা হলে বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে দেশের কর্মসংস্থানে অবদান রাখা আবাসন খাত। ড্যাপের তীব্র আপত্তি জানিয়ে ঢাকার ভূমির মালিকরা দাবি করেছেন, ঢাকার নতুন ড্যাপে শহরের ২০ শতাংশ এলাকায় সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা গেলেও অবশিষ্ট ৮০ শতাংশ এলাকায় তার অর্ধেক উচ্চতা ও আয়তনের ভবন নির্মাণ করা যাচ্ছে। এর ফলে ঢাকায় ৮০ শতাংশ মানুষ গত দুই বছরে কোনো নকশা অনুমোদন করতে পারছে না। ক্ষতিগ্রস্ত ঢাকার ভূমি মালিক সমিতির সমন্বয়ক প্রফেসর ড. দেওয়ান এম এ সাজ্জাদ বলেন, বিগত সরকারের আমলে রাজউকের অসৎ ও দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের যোগসাজশে আমাদের মতো প্লট মালিকদের ক্ষতি করতে এবং বিশেষ গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়। আমরা অচিরেই এই বৈষম্যমূলক ড্যাপ সংশোধন চাই। বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের নেতারাও ড্যাপ সংশোধনের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, ড্যাপে বিদ্যমান বৈষম্য ও ক্ষেত্রবিশেষে অস্পষ্টতার কারণে নতুন ভবনের নকশা অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলার সময় রাজউকের অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে সময়ক্ষেপণ, বিভ্রান্তি ও দুর্নীতি। সর্বোপরি, জমির মালিক তথা জনসাধারণের অযাচিত হয়রানি বেড়েছে। রিহ্যাবের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, এ মুহূর্তে আবাসন খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা ড্যাপ। এ সংকটের সমাধান না হলে বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়বে আবাসন খাত। রিহ্যাবের সহ-সভাপতি আবদুল লতিফ বলেন, ২০ অক্টোবর রাজউকের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। রাজউক চেয়ারম্যান আমাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, ড্যাপের কারণে পুরো সেক্টরই স্থবির হয়ে গেছে। নতুন নিয়মে জমির মালিকরা ভবন নির্মাণে উৎসাহিত হচ্ছেন না। আবার ডেভেলপারদেরও পোষাচ্ছে না। যার জন্য এই সেক্টরে একটা কৃত্রিম শূন্যতা তৈরি হয়েছে। দুই বছর ধরে এই শূন্যতা চলছে বলে জানান তিনি। ড্যাপ সংশোধন হলে এই সেক্টর আবার চাঙা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এদিকে গত ২৩ ডিসেম্বর রিহ্যাবের এক অনুষ্ঠানে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)- এর চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) ছিদ্দিকুর রহমান সরকার বলেছিলেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপের সংশোধিত বিধিমালা চূড়ান্ত করা হবে। গতকাল এ বিষয়ে তিনি বলেন, দুই সপ্তাহ বলেছিলাম, রাজউক থেকে ১০ দিনের মধ্যেই সংশোধিত বিধিমালা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপর বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার এবং স্থাপত্যবিদ, পরিকল্পনাবিদ, প্রকৌশলীসহ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আজ সোমবার সর্বশেষ সভা। এরপর যে কোন সময় এটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, আশাকরছি সংশোধিত বিধিমালা চূড়ান্তভাবে জারি হলে আর কোন অলোচনার বিষয় থাকবে না। যদিও বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ড্যাপের বর্তমান সুপারিশ এ ১৬ ফিট রাস্তার নিচে যারা বাড়ি বানাবে তাদের জন্য কোন সুখবর নেই। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে বেশ সুফল পাওয়া যেতে পারে।
ড্যাপে কী আছে
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড্যাপের খসড়া পরিকল্পনায় ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (এফএআর) ভিত্তিতে ভবনের আয়তন নির্ধারণের সুপারিশ করে রাজউক। এতে গুলশান, বনানী কিংবা ধানমন্ডির মতো পরিকল্পিত এলাকার তুলনায় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, বাসাবোসহ অপরিকল্পিত এলাকায় ভবনের আয়তন কম নির্ধারণ করা হয়। এ কারণে বেশির ভাগ এলাকায় আগে ফ্ল্যাট তৈরির জন্য যে আয়তন বা জায়গা পাওয়া যেত, সে তুলনায় এখন ৬০ শতাংশ পাওয়া যাবে। এতে জমির মালিক, ডেভেলপার কোম্পানি ও ক্রেতা সবাই ক্ষতির মুখে পড়বেন। শুধু তাই নয়, আশপাশের খাল-বিল, জলাশয় ও কৃষিজমি দ্রুত হ্রাস পাবে।
নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, আবাসন খাতের জন্য ভবন নির্মাণে পরিকল্পিত এলাকা যেমন- গুলশানে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও বেশি ধরা হয়। ফলে গুলশানে উঁচু ভবন করা যাবে। ফ্ল্যাটসংখ্যা বেশি হবে। পক্ষান্তরে অপরিকল্পিত এলাকা যেমন- বাসাবোতে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও কম থাকায় বাসাবোতে সবোর্চ্চ চার থেকে পাঁচ তলার বেশি ভবন করা যাবে না। ফলে ফ্ল্যাটসংখ্যাও কম হবে। অর্থাৎ যেসব এলাকায় যত বেশি এফএআর, সেখানে ভবনের আয়তন তত বেশি পাওয়া যায়। ফলে ফ্ল্যাটসংখ্যাও বেশি হবে।
রিহ্যাব নেতারা বলেন, ড্যাপে পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত এলাকার জন্য পৃথকভাবে ভবন নির্মাণের যে ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি বৈষম্যমূলক। নির্দিষ্ট কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। রিহ্যাব’র প্রস্তাবিত বিধিমালা সংশোধনের একগুচ্ছ প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে রাজউকে দিয়েছে। এতে প্লট-সংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততা সংশ্লিষ্ট অনুমোদনযোগ্য এফএআর সূচক এবং এলাকাভিত্তিক এফএআর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে তারা। সেটি বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের মতো একই আয়তনের ভবন নির্মাণের সুযোগ তৈরি হবে।
নতুন ড্যাপের কারণে আবাসন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে দাবি করছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ড্যাপ কার্যকর হওয়ার পর থেকে জমির মালিকরা ভবন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নতুন প্রকল্পও নেওয়ার হার কমেছে। ড্যাপ সংশোধন না হলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। এমনিতেই এই ব্যবসায় মন্দা চলছে। নতুন ড্যাপের কারণে মন্দা আরও গভীর হয়েছে।ড্যাপে কী আছে
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড্যাপের খসড়া পরিকল্পনায় ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (এফএআর) ভিত্তিতে ভবনের আয়তন নির্ধারণের সুপারিশ করে রাজউক। এতে গুলশান, বনানী কিংবা ধানমন্ডির মতো পরিকল্পিত এলাকার তুলনায় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, বাসাবোসহ অপরিকল্পিত এলাকায় ভবনের আয়তন কম নির্ধারণ করা হয়। এ কারণে বেশির ভাগ এলাকায় আগে ফ্ল্যাট তৈরির জন্য যে আয়তন বা জায়গা পাওয়া যেত, সে তুলনায় এখন ৬০ শতাংশ পাওয়া যাবে। এতে জমির মালিক, ডেভেলপার কোম্পানি ও ক্রেতা সবাই ক্ষতির মুখে পড়বেন। শুধু তাই নয়, আশপাশের খাল-বিল, জলাশয় ও কৃষিজমি দ্রুত হ্রাস পাবে।
নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, আবাসন খাতের জন্য ভবন নির্মাণে পরিকল্পিত এলাকা যেমন- গুলশানে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও বেশি ধরা হয়। ফলে গুলশানে উঁচু ভবন করা যাবে। ফ্ল্যাটসংখ্যা বেশি হবে। পক্ষান্তরে অপরিকল্পিত এলাকা যেমন- বাসাবোতে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও কম থাকায় বাসাবোতে সবোর্চ্চ চার থেকে পাঁচ তলার বেশি ভবন করা যাবে না। ফলে ফ্ল্যাটসংখ্যাও কম হবে। অর্থাৎ যেসব এলাকায় যত বেশি এফএআর, সেখানে ভবনের আয়তন তত বেশি পাওয়া যায়। ফলে ফ্ল্যাটসংখ্যাও বেশি হবে।
রিহ্যাব নেতারা বলেন, ড্যাপে পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত এলাকার জন্য পৃথকভাবে ভবন নির্মাণের যে ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি বৈষম্যমূলক। নির্দিষ্ট কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। রিহ্যাব’র প্রস্তাবিত বিধিমালা সংশোধনের একগুচ্ছ প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে রাজউকে দিয়েছে। এতে প্লট-সংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততা সংশ্লিষ্ট অনুমোদনযোগ্য এফএআর সূচক এবং এলাকাভিত্তিক এফএআর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে তারা। সেটি বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের মতো একই আয়তনের ভবন নির্মাণের সুযোগ তৈরি হবে।
নতুন ড্যাপের কারণে আবাসন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে দাবি করছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ড্যাপ কার্যকর হওয়ার পর থেকে জমির মালিকরা ভবন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নতুন প্রকল্পও নেওয়ার হার কমেছে। ড্যাপ সংশোধন না হলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। এমনিতেই এই ব্যবসায় মন্দা চলছে। নতুন ড্যাপের কারণে মন্দা আরও গভীর হয়েছে।ড্যাপে কী আছে
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড্যাপের খসড়া পরিকল্পনায় ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (এফএআর) ভিত্তিতে ভবনের আয়তন নির্ধারণের সুপারিশ করে রাজউক। এতে গুলশান, বনানী কিংবা ধানমন্ডির মতো পরিকল্পিত এলাকার তুলনায় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, বাসাবোসহ অপরিকল্পিত এলাকায় ভবনের আয়তন কম নির্ধারণ করা হয়। এ কারণে বেশির ভাগ এলাকায় আগে ফ্ল্যাট তৈরির জন্য যে আয়তন বা জায়গা পাওয়া যেত, সে তুলনায় এখন ৬০ শতাংশ পাওয়া যাবে। এতে জমির মালিক, ডেভেলপার কোম্পানি ও ক্রেতা সবাই ক্ষতির মুখে পড়বেন। শুধু তাই নয়, আশপাশের খাল-বিল, জলাশয় ও কৃষিজমি দ্রুত হ্রাস পাবে।
নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, আবাসন খাতের জন্য ভবন নির্মাণে পরিকল্পিত এলাকা যেমন- গুলশানে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও বেশি ধরা হয়। ফলে গুলশানে উঁচু ভবন করা যাবে। ফ্ল্যাটসংখ্যা বেশি হবে। পক্ষান্তরে অপরিকল্পিত এলাকা যেমন- বাসাবোতে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও কম থাকায় বাসাবোতে সবোর্চ্চ চার থেকে পাঁচ তলার বেশি ভবন করা যাবে না। ফলে ফ্ল্যাটসংখ্যাও কম হবে। অর্থাৎ যেসব এলাকায় যত বেশি এফএআর, সেখানে ভবনের আয়তন তত বেশি পাওয়া যায়। ফলে ফ্ল্যাটসংখ্যাও বেশি হবে।
রিহ্যাব নেতারা বলেন, ড্যাপে পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত এলাকার জন্য পৃথকভাবে ভবন নির্মাণের যে ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি বৈষম্যমূলক। নির্দিষ্ট কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। রিহ্যাব’র প্রস্তাবিত বিধিমালা সংশোধনের একগুচ্ছ প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে রাজউকে দিয়েছে। এতে প্লট-সংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততা সংশ্লিষ্ট অনুমোদনযোগ্য এফএআর সূচক এবং এলাকাভিত্তিক এফএআর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে তারা। সেটি বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের মতো একই আয়তনের ভবন নির্মাণের সুযোগ তৈরি হবে।
নতুন ড্যাপের কারণে আবাসন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে দাবি করছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ড্যাপ কার্যকর হওয়ার পর থেকে জমির মালিকরা ভবন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নতুন প্রকল্পও নেওয়ার হার কমেছে। ড্যাপ সংশোধন না হলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। এমনিতেই এই ব্যবসায় মন্দা চলছে। নতুন ড্যাপের কারণে মন্দা আরও গভীর হয়েছে।ড্যাপে কী আছে
খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ড্যাপের খসড়া পরিকল্পনায় ফ্লোর এরিয়া রেশিওর (এফএআর) ভিত্তিতে ভবনের আয়তন নির্ধারণের সুপারিশ করে রাজউক। এতে গুলশান, বনানী কিংবা ধানমন্ডির মতো পরিকল্পিত এলাকার তুলনায় মিরপুর, মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, বাসাবোসহ অপরিকল্পিত এলাকায় ভবনের আয়তন কম নির্ধারণ করা হয়। এ কারণে বেশির ভাগ এলাকায় আগে ফ্ল্যাট তৈরির জন্য যে আয়তন বা জায়গা পাওয়া যেত, সে তুলনায় এখন ৬০ শতাংশ পাওয়া যাবে। এতে জমির মালিক, ডেভেলপার কোম্পানি ও ক্রেতা সবাই ক্ষতির মুখে পড়বেন। শুধু তাই নয়, আশপাশের খাল-বিল, জলাশয় ও কৃষিজমি দ্রুত হ্রাস পাবে।
নতুন ড্যাপ অনুযায়ী, আবাসন খাতের জন্য ভবন নির্মাণে পরিকল্পিত এলাকা যেমন- গুলশানে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও বেশি ধরা হয়। ফলে গুলশানে উঁচু ভবন করা যাবে। ফ্ল্যাটসংখ্যা বেশি হবে। পক্ষান্তরে অপরিকল্পিত এলাকা যেমন- বাসাবোতে পাঁচ কাঠা জায়গায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও কম থাকায় বাসাবোতে সবোর্চ্চ চার থেকে পাঁচ তলার বেশি ভবন করা যাবে না। ফলে ফ্ল্যাটসংখ্যাও কম হবে। অর্থাৎ যেসব এলাকায় যত বেশি এফএআর, সেখানে ভবনের আয়তন তত বেশি পাওয়া যায়। ফলে ফ্ল্যাটসংখ্যাও বেশি হবে।
রিহ্যাব নেতারা বলেন, ড্যাপে পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত এলাকার জন্য পৃথকভাবে ভবন নির্মাণের যে ফ্লোর এরিয়া রেশিও বা এফএআর নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি বৈষম্যমূলক। নির্দিষ্ট কিছু সুবিধাভোগী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষায় এমনটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। রিহ্যাব’র প্রস্তাবিত বিধিমালা সংশোধনের একগুচ্ছ প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে রাজউকে দিয়েছে। এতে প্লট-সংলগ্ন রাস্তার প্রশস্ততা সংশ্লিষ্ট অনুমোদনযোগ্য এফএআর সূচক এবং এলাকাভিত্তিক এফএআর বাড়ানোর সুপারিশ করেছে তারা। সেটি বাস্তবায়িত হলে বর্তমানের মতো একই আয়তনের ভবন নির্মাণের সুযোগ তৈরি হবে।
নতুন ড্যাপের কারণে আবাসন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে দাবি করছেন আবাসন খাতের ব্যবসায়ীরা। তারা বলেছেন, ড্যাপ কার্যকর হওয়ার পর থেকে জমির মালিকরা ভবন করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নতুন প্রকল্পও নেওয়ার হার কমেছে। ড্যাপ সংশোধন না হলে ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যাবে। এমনিতেই এই ব্যবসায় মন্দা চলছে। নতুন ড্যাপের কারণে মন্দা আরও গভীর হয়েছে।
রিহ্যাবের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী তানভীরুল হক প্রবাল বলেন, ড্যাপের সমস্যা নিরসন হচ্ছে না বলে ডেভেলপাররা নতুন প্রজেক্ট নিতে পারছে না। বসুন্ধরা, ধানমন্ডিসহ পরিকল্পিত এলাকায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও বেশি ধরা হয়েছে নতুন ড্যাপে। এটি যত বেশি হবে, তত বেশি উচ্চ ভবন করা যাবে। কিন্তু মিরপুর, বাড্ডাসহ অপরিকল্পিত এলাকায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও কম। ফলে এসব এলাকায় পাঁচতলার বেশি উঁচু ভবন করা যাবে না। এতে জমির মালিক, ডেভেলপার কোম্পানি ও ফ্ল্যাটের ক্রেতা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। একই সঙ্গে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে ভোক্তারা এখন আগের মতো ফ্ল্যাট ক্রয়ে উৎসাহী নয়। অনেক দিন ধরে আবাসন ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। ড্যাপের কারণে মন্দা আরও বেশি হয়েছে।
রাজউক বলেছে, শহরের জনসংখ্যার ঘনত্ব কমানোর জন্য অপরিকল্পিত এলাকায় ফ্লোর এরিয়া রেশিও কমানো হয়েছে। এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে রিহ্যাবের সাবেক এই নেতা বলেন, এ ধারণা ঠিক নয়। আমি মনে করি, ভবনের উচ্চতা নিয়ন্ত্রণ করে জনসংখ্যার ঘনত্ব কমানো যাবে না। সারা দুনিয়ায় এখন উঁচু ভবন হচ্ছে। রিহ্যাব অপরিকল্পিত এলাকায় ভবনের আয়তন বাড়ানোর পাশাপাশি প্রস্তাবিত বিধিমালা সংশোধনের একগুচ্ছ প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে রাজউককে দিয়েছে। রাজউক বলেছে, তারা প্রস্তাবগুলো পর্যালোচনা করবে।
১৯৫৩ সালের ‘টাউন ইমপ্রুভমেন্ট অ্যাক্টের’ আওতায় ২০১০ সালে প্রথম ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়। পাসের পর আবাসন ব্যবসায়ীসহ প্রভাবশালীদের চাপে সেটি চূড়ান্ত করতে মন্ত্রিসভা কমিটি গঠনে বাধ্য হয় সরকার। ওই কমিটি ড্যাপ চূড়ান্ত না করে উল্টো দুই শতাধিক সংশোধনী আনে। এসব সংশোধনীর মাধ্যমে কার্যত জলাভূমি ভরাটের বৈধতা দেওয়া হয়। প্রথম ড্যাপের মেয়াদ ছিল ২০১৫ সাল পর্যন্ত। পরে মেয়াদ বাড়ানো হয়। রাজউক ২০২০ সালে দ্বিতীয় ড্যাপের (২০২২-২০৩৫) খসড়া প্রকাশ করে। গত বছরের আগস্টে পাস হওয়া এই ড্যাপ ছয়টি স্বতন্ত্র অঞ্চলে বিভক্ত। সেগুলো হচ্ছে কেন্দ্রীয় অঞ্চল: ঢাকা শহর, উত্তর অঞ্চল: গাজীপুর সিটি করপোরেশন, পূর্ব অঞ্চল: কালীগঞ্জ ও রূপগঞ্জ উপজেলা, দক্ষিণ অঞ্চল: নারায়ণগঞ্জ, দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল: কেরানীগঞ্জ উপজেলা এবং পশ্চিম অঞ্চল: সাভার উপজেলা।
বিগত ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি স্থানীয় হোটেলে ড্যাপ নিয়ে সভা হয়, সেখানে তৎকালীন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ অনেক নেতৃবৃন্দ সেই সভায় উপস্থিত ছিলেন। সেই সভাতেই মূলত ঢাকা বাসীর উপর ড্যাপ চাপিয়ে দেওয়া হয়। এরপর ২০২২ সালের আগস্ট মাসে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে তারপর থেকেই ঢাকার জমির মালিকরা ফ্ল্যাট তৈরিতে বৈষম্যের মধ্যে পড়েন। গত ২ বছর ধরে নকশা অনুমোদন কমতে থাকে এবং আবাসন খাতে স্থবিরতা নেমে আসে।
রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ড্যাপের সমস্যার সমাধান না হলে আবাসনশিল্প কোনো দিন ভালো হবে না। ঢাকা শহরের ৯০ শতাংশই অপরিকল্পিত এলাকা। নতুন ড্যাপের ফলে ওই সব এলাকায় পাঁচতলার ওপরে ভবন করতে দিচ্ছে না রাজউক। ফলে ওই সব এলাকায় নতুন কোনো ভবন তৈরি হচ্ছে না। আমরা ড্যাপের সংশোধনী চাই। আগের নিয়মে ফিরে যেতে চাই। যেখানে ভবন নির্মাণে এলাকাভেদে কোনো পার্থক্য থাকবে না। তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনের বেশি আয়তন বা উচ্চতা দিলে ঢাকা আরও বেশি বাসযোগ্য হবে। ইনকিলাব