আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শ ম রেজাউল করিম প্রথমবারের মতো সাংসদ হয়ে পেয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব। নিজের কাজের অগ্রাধিকার-চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সচিবালয়ে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মোশতাক আহমেদ।
প্রথম আলো: মন্ত্রী হিসেবে আপনার অগ্রাধিকার কী এবং সামনে কী চ্যালেঞ্জ আছে?
শ ম রেজাউল করিম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচন-পূর্ব ইশতেহারে ছিল সবার জন্য আবাসন নিশ্চিত করা। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় আবাসন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজটিই প্রধানত করে থাকে। এ ক্ষেত্রে আমার প্রথম অগ্রাধিকার হবে মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তর ও সংস্থাগুলোর কাজের গতি বাড়ানো, সব কাজের মধ্যে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও নিয়মকানুন শতভাগ অনুসরণ করা।
প্রথম আলো: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ভিশন হিসেবে বলা হয়েছে, পরিকল্পিত নগর, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন। এ বিষয়ে আপনার কর্মপরিকল্পনা কী?
শ ম রেজাউল করিম: আগে অনেক ক্ষেত্রে অপরিকল্পিতভাবে দালানকোঠা নির্মাণ, আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। এ-জাতীয় অবস্থা যাতে আর কোনোভাবেই না হয় এবং আবাসন যাতে পরিবেশসম্মত, পরিকল্পিত ও শৃঙ্খলার অধীনে হয়, সেটাকেই আমরা অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কিছু বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান, যারা রিহাবেরও সদস্য নয়, তারা কোনোভাবে দায়সারা গোছের বেসরকারি আবাসন প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি নিবন্ধন নিয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করছে। আমাদের মন্ত্রণালয়, মন্ত্রণালয়ের অধীন জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, রাজউকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছি যত প্রভাবশালী হোক না কেন, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে।
প্রথম আলো: আপনি এর আগে বলেছেন, রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। আসলে কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
শ ম রেজাউল করিম: ঝুঁকিপূর্ণ ভবন এবং নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে বা অনুমোদন ছাড়া যাঁরা ইমারত নির্মাণ করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান ছিল। মন্ত্রী হিসেবে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর এই কাজের গতি বৃদ্ধি করার কথা বলেছি। তবে আমাদের কিছু সমস্যাও আছে। কাজে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশসহ জনবল দরকার। এ-জাতীয় সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্যও বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করছি।
প্রথম আলো: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সরকারি চাকরিজীবীদের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু বর্তমানে যে ব্যবস্থা আছে, তা অপ্রতুল। এই সমস্যা মেটাতে কী পদক্ষেপ নেবেন?
শ ম রেজাউল: প্রধানমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, যাঁরা চাকরি করেন, তাঁরা বিভিন্ন জায়গা থেকে আসেন, তাঁদের আবাসন নিশ্চিত না হলে দায়িত্বশীল সেবাও পাওয়া সম্ভব নয়। তাই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেমন রাজধানীর ইস্কাটনে গ্রেড-১ কর্মকর্তাদের জন্য ইমারত নির্মাণ শেষ হওয়ার পথে। আজিমপুর ও পরিকল্পনা কমিশনের পাশে বড় বড় দুটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ-জাতীয় কর্মকাণ্ড চলছে। বেইলি রোড-মিন্টো রোডে একটি বাড়িতে একটি পরিবার থাকে, সেখানে ছয় থেকে সাত বিঘা জমি অপচয় হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন সেগুলো ভেঙে সেখানে বহুতলবিশিষ্ট ভবন নির্মাণ করার।
প্রথম আলো: পূর্বাচল, উত্তরা ও ঝিলমিলের মতো প্রকল্পগুলো বছরের পর বছর লেগে যাচ্ছে। এই কাজ কীভাবে ত্বরান্বিত করবেন?
শ ম রেজাউল: পূর্বাচল, উত্তরা, ঝিলমিল—এই প্রকল্পগুলো গ্রহণ করার পর বেশ কিছু প্রতিকূলতা ছিল। পূর্বাচল ২০১৯ সালের মধ্যে বসবাসের উপযোগী হবে। ঝিলমিল প্রকল্পের বসবাসের উপযোগিতা আগামী এক বছরের মধ্যে হয়ে যাবে। উত্তরা তৃতীয় পর্যায় প্রকল্পে বিদ্যুতের লাইনের কাজ চলছে। ড্রেনেজের কাজ চলছে। আশা করছি, সেটিও ২০১৯ সালের মধ্যে হবে।
প্রথম আলো: রাজউকসহ বিভিন্ন সংস্থার সেবার কাজ সহজ করতে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, কিন্তু বাস্তবায়ন কতটুকু করতে পারবেন?
শ ম রেজাউল করিম: বাস্তবায়ন ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। ১ মে থেকে নকশা ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে অনুমোদনের জন্য জমা দেওয়ার সুযোগ থাকবে না। বাসায় বসে ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের মাধ্যমে স্ক্যান করেই নকশা দাখিল করলে এক সপ্তাহ বা ১০ দিনের মধ্যে বার্তা পাঠিয়ে জানানো হবে নকশা অনুমোদিত হলো অথবা অমুক কারণে হলো না।
প্রথম আলো: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নগরের সুবিধা গ্রামেও যাবে। সে ক্ষেত্রে আপনার মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে, কী পদক্ষেপ নিচ্ছেন?
শ ম রেজাউল করিম: গ্রামের রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, খেলার মাঠ, হাসপাতাল, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ যেসব কাজ পূর্ত মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন, সেটা আমরা করব। সব জেলায় হাউজিং এস্টেট করার পরিকল্পনা নিয়েছি, যাতে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষও শহরের নাগরিক সুবিধা পেতে পারে।