দেশের আবাসন খাতে নতুন একটি ধারণা কনডোমিনিয়াম। বড় অনেক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের প্রকল্প নিচ্ছে। মানুষজনও আগ্রহ দেখাচ্ছে। কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেছেন রাকিন ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এ কে একরামুজ্জামান।
প্রথম আলো: দেশের আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো বর্তমানে কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে। বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার এই বিশেষ প্রকল্পের সম্ভাবনা কেমন?
এস এ কে একরামুজ্জামান: সুযোগ-সুবিধার দিক থেকে ঢাকা তুলনামূলক উন্নত হলেও জীবনযাপন অনেক যান্ত্রিক। আমরা আমাদের সন্তানদের দরজার বাইরে বের হতে দিতে পারি না। তাদের খেলার জায়গা নেই। সাঁতার কাটার জায়গা নেই। সন্তানেরা একটি ফ্ল্যাটের মধ্যে অনেকটা বন্দিজীবন যাপন করে। বুকভরে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ নেই। এটি কোনো স্বাভাবিক জীবন নয়। কেবল শিশু নয়, গৃহিণী ও বয়স্ক মানুষের জন্য একই কথা প্রযোজ্য। যারা বাইরে কাজ করে, তারাও ঘরে এসে স্বস্তি পান না। সে জন্যই মিরপুরে ১৬ একর জমির ওপর বিজয় রাকিন সিটি নামে কনডোমিনিয়াম প্রকল্প করেছি। সেখানে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ ৩৬ ভবনে ১ হাজার ৯৫০টি অ্যাপার্টমেন্ট আছে। অন্য অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠানও কনডোমিনিয়াম করছে। এ ধরনের প্রকল্পে মানুষের জীবন সত্যিকার অর্থেই পরিবর্তন হয়ে যাবে।
প্রথম আলো: বিদেশে আদর্শ কনডোমিনিয়াম প্রকল্পে কী কী সুযোগ-সুবিধা থাকে? বাংলাদেশে কি আপনারা সেই রকম করতে পারছেন?
এস এ কে একরামুজ্জামান: মিরপুরের বিজয় রাকিন সিটি আমাদের প্রথম প্রকল্প। সে জন্য আমরা কিছুটা পরীক্ষা–নিরীক্ষা করেছি। আমরা অনেক কিছু শিখেছি। পরবর্তী প্রকল্প আমরা দুবাই বা সিঙ্গাপুরের মতো মানসম্পন্ন করব। নিউইয়র্ক বা মালয়েশিয়া যে সেবা দেবে, তার চেয়ে আমরা ভালো দিতে পারব। এটি কোনো সমস্যা নয়। বিদেশের বিভিন্ন দেশের মতোই আমাদের প্রকল্পে স্কুল, কমন স্পেস, সুইমিংপুল, মসজিদ, কমিউনিটি হলের জন্য আলাদা ভবনসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আছে।
প্রথম আলো: কনডোমিনিয়াম জনপ্রিয় হচ্ছে। এ ধরনের প্রকল্পে গ্রাহকেরা যাতে কোনোভাবে প্রতারিত না হন, সে বিষয়ে কী করা দরকার?
এস এ কে একরামুজ্জামান: প্রত্যেকেই আমার প্রতিযোগী। ফলে আমি কাউকে ব্যক্তিগতভাবে দোষারোপ করতে চাই না। তবে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাব যদি বিষয়টি কঠোরভাবে তদারক করে, তাহলে ক্রেতাদের প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। নিয়মকানুন তো নির্দিষ্ট করাই আছে। সেটি আমাদের কোম্পানি মেনে চলে। তবে অনেকেই সেগুলো মানতে চান না। আইন না মানা এ দেশে একধরনের আইন হয়ে গেছে।
প্রথম আলো: কনডোমিনিয়াম প্রকল্প করতে বড় জমি দরকার। ঢাকায় সে রকম জমি পাওয়া কষ্ট। অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানই আবার ঢাকার বাইরে প্রকল্প করতে চায় না। তাদের যুক্তি, মানুষ যেতে চায় না। এই সমস্যার সমাধান কীভাবে সম্ভব?
এস এ কে একরামুজ্জামান: প্রচলিত একটা ধারণা আছে, মানুষ ঢাকার বাইরে যেতে চায় না। আমরা তো কাঁচপুরে প্রকল্প নিয়েছি। সেটি তো মূল ঢাকার বাইরে। মানুষ বাইরে যাবে, সে জন্য সুযোগ করে দিতে হবে। আসলে আমাদের উদ্যোক্তারা কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না। তারা ফ্ল্যাট বিক্রির শতভাগ নিশ্চয়তা চায় বলেই ঢাকার ভেতরে প্রকল্প নেয়। পৃথিবীর সব দেশেই শহর বিস্তৃত হচ্ছে। মানুষও শহরের বাইরে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ শহরের বাইরে যাবে। আজকের চিন্তা করে কোনো লাভ নেই। পাঁচ বছর পর মিরপুর, কাঁচপুর কিংবা শ্রীপুরের যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হয়ে যাবে। সরকার সে রকম বিভিন্ন প্রকল্প নিয়েছে।
প্রথম আলো: আবাসন প্রতিষ্ঠানগুলো যে দামে কনডোমিনিয়াম প্রকল্পের ফ্ল্যাট বিক্রি করছে, তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। দাম কীভাবে কমানো যাবে?
এস এ কে একরামুজ্জামান: আমরা দেড় শ বিঘা জমির ওপর কাঁচপুরে নতুন প্রকল্প নিয়েছি। সেটি আমাদের নিজেদের জমি। এখানে আমরা অনেকটা সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্ল্যাট দিতে পারব। দেশের মানুষের সাধ ও সাধ্যের সংযোগ ঘটাবে কাঁচপুর প্রকল্প। এটি ঐতিহাসিক প্রকল্প হবে। মূলত ঢাকায় জমির দাম বেশি হওয়ার কারণেই ফ্ল্যাটের দাম বেড়ে যায়।