আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com

জমি-ফ্ল্যাটেও বাতিল হচ্ছে কালো টাকা সাদার সুযোগ »

জমি-ফ্ল্যাটেও বাতিল হচ্ছে কালো টাকা সাদার সুযোগ

জমি ও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের মাধ্যমে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা সাদা করার সুযোগ এবার বাতিল হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার সবুজ সংকেত দিলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে সুযোগ বন্ধ হলে টাকা পাচারের আশঙ্কা করছেন দুই খাতের উদ্যোক্তারা।

গত ২ সেপ্টেম্বর ১৫ শতাংশ কর দিয়ে অপ্রদর্শিত অর্থ সাদা করার সুযোগ বাতিল করে সরকার। কিন্তু জমি ও ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় এবং বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন ওঠায় দুই খাতে বিনিয়োগের সুযোগ বাতিলের পথে হাঁটছে এনবিআর। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা বলছেন, জমি-ফ্ল্যাটে বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে এটি বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে আবাসন খাতের সংগঠন রিহ্যাবের সহসভাপতি এম এ আউয়াল বলেন, অপ্রদর্শিত অর্থ জমি ও অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় এ খাতে প্রাণচাঞ্চল্য এসেছিল। এ সুযোগ বাতিল হলে খাতটি মুখ থুবড়ে পড়বে। টাকাও পাচার হয়ে যাবে।

আয়কর আইনের প্রথম তপশিলের ‘বিনিয়োগে বিশেষ করহার’ অংশে ফ্ল্যাট ও প্লটে কত বর্গমিটারে কত টাকা জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করা যায়, তা উল্লেখ রয়েছে। ঢাকার গুলশান, বনানী, মতিঝিল, তেজগাঁও, ধানমন্ডি, ওয়ারী, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, কাফরুল, নিউমার্কেট ও কলাবাগান থানার সব মৌজায় স্থাপনা, বাড়ি, ফ্ল্যাট, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্লোরে প্রতি বর্গমিটারে কর ৬ হাজার টাকা। আর জমির ক্ষেত্রে প্রতি বর্গমিটারে ১৫ হাজার টাকা।

অন্যদিকে, বংশাল, মোহাম্মদপুর, সূত্রাপুর, যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ক্যান্টনমেন্ট, চকবাজার, কোতোয়ালি, লালবাগ, খিলগাঁও, শ্যামপুর, শাহজাহানপুর, মিরপুর, দারুস সালাম, দক্ষিণখান, উত্তরখান, তুরাগ, শাহ আলী, সবুজবাগ, কদমতলী, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, ডেমরা, আদাবর, গেণ্ডারিয়া, খিলক্ষেত, মুগদা, রূপনগর, ভাসানটেক, বাড্ডা, পল্লবী, ভাটারা থানা, চট্টগ্রামের খুলশী, পাঁচলাইশ, পাহাড়তলী; নারায়ণগঞ্জের সদর, সোনারগাঁও, ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর থানা; গাজীপুর সদর থানার সব মৌজার ফ্ল্যাট-স্থাপনায় প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। জমিতে প্রতি বর্গমিটারে ১০ হাজার টাকা।

ঢাকার দোহার, নবাবগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, সাভার, ধামরাই; চট্টগ্রামের আকবর শাহ, ইপিজেড, কর্ণফুলী, চকবাজার, চান্দগাঁও, ডবলমুরিং, পতেঙ্গা, বন্দর, বাকলিয়া, বায়েজিদ বোস্তামী ও সদরঘাট থানা; গাজীপুরের জয়দেবপুর, কালীগঞ্জ, বাসন, কোনাবাড়ী, গাছা, টঙ্গী পূর্ব, টঙ্গী পশ্চিম; নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার থানার সব মৌজার ফ্ল্যাট-স্থাপনায় প্রতি বর্গমিটারে ১ হাজার ৫০০ টাকা। আর জমিতে প্রতি বর্গমিটারে ৩ হাজার টাকা। এসব থানা এলাকা এবং ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর সিটি করপোরেশন ছাড়া অন্যান্য সিটি করপোরেশন ও অন্য কোনো উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা সদরে অবস্থিত পৌরসভার সব মৌজার ফ্ল্যাট-স্থাপনায় প্রতি বর্গমিটারে কর ১ হাজার টাকা। আর জমিতে প্রতি বর্গমিটারে ২ হাজার টাকা। পৌরসভার সব মৌজায় ফ্ল্যাটে ৮৫০ টাকা ও জমিতে ১ হাজার টাকা এবং এর বাইরে জেলার যে কোনো এলাকার সব মৌজার ক্ষেত্রে ফ্ল্যাট-স্থাপনায় প্রতি বর্গমিটারে ৫০০ ও জমিতে প্রতি বর্গমিটারে ৩০০ টাকা হারে কর দিতে হয়।

এনবিআর সূত্র জানায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত নগদ অর্থ ও ব্যাংক আমানত প্রদর্শনের সুযোগ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বর্গমিটারপ্রতি নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট প্রদর্শনের সুযোগও ছিল। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওই অর্থবছর ১১ হাজার ৮৩৯ জন মোট ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈধ করেছেন, যা ছিল দেশের ইতিহাসে এক বছরে সর্বোচ্চ কালো টাকা সাদা করার ঘটনা। এতে সরকার রাজস্ব পায় ২ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৭ হাজার ৫৫ জন ব্যাংকে জমা বা নগদ ১৬ হাজার ৮৩০ কোটি টাকা বৈধ করেছেন। বাকি টাকা জমি, ফ্ল্যাট বা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। এর পরের বছর, অর্থাৎ ২০২১-২২ অর্থবছর সাদা করার ক্ষেত্রে সাড়া না পাওয়ায় এ সুবিধা বাতিল করা হয়।

কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বাতিলে এনবিআরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ১৫ শতাংশ হারে আয়কর পরিশোধ করে অপ্রদর্শিত পরিসম্পদ প্রদর্শন করার বিধান অর্থ আইন-২০২৪ সালের মাধ্যমে সংযোজন করা হয়েছে। একজন নিয়মিত করদাতাকে তার আয়ের ওপর সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত আয়কর দিতে হয়। আর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে প্রদেয় করের ওপর আরও সর্বোচ্চ ৩৫ শতাংশ হারে সারচার্জ দিতে হয়। কিন্তু মাত্র ১৫ শতাংশ হারে কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়। তাই ন্যায়নিষ্ঠ ও সমতাভিত্তিক রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে এনবিআর ১৫ শতাংশ আয়কর পরিশোধ করে নগদ অর্থসহ অপ্রদর্শিত সমজাতীয় পরিসম্পদ প্রদর্শনের বিশেষ ব্যবস্থা-সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত কর হয়েছে।

এ আদেশের ফলে পুঁজিবাজার, নগদ, ব্যাংকে থাকা অর্থ, ফিন্যান্সিয়াল স্কিম অ্যান্ড ইনস্ট্রুমেন্টসহ সব ধরনের আমানতের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা বৈধ করার সুবিধা বাতিল হয়ে যায়। এসব ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করতে হলে এখন প্রযোজ্য কর, যা সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ দিতে হবে। ওই প্রদেয় করের ওপর জরিমানা গুনতে হবে ১০ শতাংশ।