মন্দার বাজারে ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রি ও বুকিংয়ের রেকর্ড হয়েছে রিহ্যাব ফেয়ারে। গতকাল শুক্রবার ক্রেতা-দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) আবাসন মেলায়। বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৪০৩ কোটি টাকার ফ্ল্যাট-প্লট বিক্রি ও বুকিং হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এদিন রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন স্টল ঘুরে পছন্দের প্লট ও ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছেন ক্রেতারা। সব মিলিয়ে এবারের মেলায় প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা বিক্রি ও বুকিং হয়েছে বলে ধারণা করছেন আয়োজকরা।
গত ২৩ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় পাঁচ দিনব্যাপী এ আবাসন মেলা। এই পাঁচ দিনে দুই শতাধিক স্টল অংশ নেয়। আবাসন কোম্পানি ছাড়াও লিংকেট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পসহ নানা আয়োজনে এবারের মেলা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে পেরেছে বলে মনে করছেন আয়োজকরা।
এবারের রিহ্যাব ফেয়ারে শেষ দিন (শুক্রবার) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ৪০৩ কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার ফ্ল্যাট, প্লট এবং বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি ও বুকিং হয়েছে। এর মধ্যে ফ্ল্যাট বিক্রি ও বুকিং হয়েছে ২৩০ কোটি টাকা। প্লট-৯৬ কোটি এবং বাণিজ্যিক স্পেস ৭৭ কোটি ১২ লাখ ৭৪ হাজার টাকার বুকিং ও বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক কমিটমেন্ট এসেছে প্রায় ১ হাজার ৯০ কোটি টাকা। মেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থী এসেছে ১৭ হাজার ৭২৯ জন।
বিগত বছরগুলোর হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত তিন বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি ফ্ল্যাট ও প্লট বিক্রি-বুকিং হয়েছে। গত বছর রিহ্যাব ফেয়ার অনুষ্ঠিত হয়নি। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে প্রায় ৩৫১ কোটি ১৬ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি এবং বুকিং হয়েছিল। ২০২১ সালে ৩৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার ফ্ল্যাট, প্লট ও বাণিজ্যিক স্পেস বিক্রি এবং বুকিং হয়েছিল।
আবাসন খাতে মন্দার মধ্যে প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি ও বুকিংয়ে ক্রেতাদের স্বতঃস্ফূর্ত সাড়াকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন আয়োজকরা। তারা মনে করছেন, যে উদ্দেশ্য নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয় সেটা সফল হয়েছে। এই কয়েক দিনে ঢাকাবাসীর ব্যাপক সাড়া আবাসন খাত উৎসাহিত করেছে। মেলায় বিক্রির চেয়ে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান আসে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য। তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
রিহ্যাব নেতারা মনে করছেন, মেলায় অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো মেলায় আসা ক্রেতাদের কাছে তাদের পণ্যের মান সম্পর্কে তুলে ধরেছেন। তারা ক্রেতা-দর্শনার্থীদের নার্সিং করবেন আর ক্রেতারা যে প্রোডাক্ট দেখে গেলেন, তা যাচাই-বাছাই করবেন এবং পরবর্তীকালে ফাইনাল সিদ্ধান্ত নেবেন। একসঙ্গে অনেক ক্রেতা পাওয়া একমাত্র রিহ্যাব ফেয়ারেই সম্ভব।
এদিকে ক্রেতাদের বাইরেও অনেক দর্শনার্থী প্লট-ফ্ল্যাট পছন্দ করতে মেলায় এসেছিলেন। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধা এবং অফার বিবেচনায় তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। কথা হয় বেসরকারি চাকরিজীবী আলাউদ্দিন খন্দকারের সঙ্গে। তিনি জানান, কিছুদিন পর দেশের বাইরে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। যাওয়ার আগে পরিবারের জন্য একটি ফ্ল্যাট কিনে রেখে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘আমি মিরপুরের দিকে ফ্ল্যাট খুঁজছি। মনিপুর স্কুলের আশপাশে হলে ছেলের পড়াশোনা সহজ হবে।’
গৃহিণী আসমা আক্তার স্বামীর সঙ্গে মেলায় ঘুরতে এসেছেন। এখনো ফ্ল্যাট কেনার মতো টাকা তাদের হাতে নেই। কিন্তু ছেলেমেয়ের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে একটি প্লট বা ফ্ল্যাট বুকিং দিতে চান তারা। আলাপকালে আসমা আক্তার বলেন, ‘মেলায় এসে মনে হচ্ছে আমরাও প্লট বা ফ্ল্যাট কিনতে পারি। যেহেতু কিস্তিতে টাকার দেওয়ার সুযোগ আছে। তাছাড়া ব্যাংক লোনেরও সুযোগ আছে।’
এ বছর প্রথম গবেষণার জন্য রিহ্যাব ফেয়ারে রিয়েল এস্টেটের তথ্য সংগ্রহের জন্য রিয়েল এস্টেট রিসার্চ স্ট্যান্ডিং কমিটির পক্ষ থেকে একটি বুথ স্থাপন করা হয়। মেলায় অংশ নেওয়া প্রায় এক হাজার ক্রেতা রিসার্চ ফরম পূরণের মাধ্যমে আবাসন খাতের ওপর তাদের মতামত ব্যক্ত করেন। রিয়েল এস্টেট রিসার্চ স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান ড. মো. হারুন অর রশিদ বলেন, মেলায় আসা ক্রেতা-দর্শনার্থীরা যেভাবে মতামত দিয়েছেন, তার ওপর ভিত্তি করে রিয়েল এস্টেট সেক্টরের ভবিষ্যৎ অগ্রগতি নিরূপণ করা সহজ হবে।