আমাদের মেইল করুন abasonbarta2016@gmail.com

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে তালা ভেঙে ৬৫ ফ্ল্যাট দখল -

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে তালা ভেঙে ৬৫ ফ্ল্যাট দখল

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একটি আবাসন প্রকল্পে ফ্ল্যাট দখলের মহোৎসব চলছে। গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর তালা ভেঙে সিটি করপোরেশনের এসব ফ্ল্যাট দখল করছেন বহিরাগত ব্যক্তিরা। করপোরেশনের মূল্যবান সম্পত্তি দখল হয়ে গেলেও কর্মকর্তারা বলছেন, নানা জটিলতার কারণে তাঁরা দখলদারদের উচ্ছেদ করতে পারছেন না।

সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার ধলপুরে নব্বইয়ের দশকে তৎকালীন সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্রকল্প তৈরি করেছিল। পুরোনো ভবনগুলো তিন বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়। সেই বিবেচনায় এসব ফ্ল্যাট খালি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। চাকরি শেষে চলে যাওয়া কর্মকর্তা–কর্মচারীদের ফ্ল্যাটগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই ৬৫টি ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে সেগুলো দখল হয়ে যায়।

২৩টি ভবনে ১৮০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১১৫টি ফ্ল্যাটে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা বাস করছেন।

যে যাঁর মতো দখল

ধলপুরের এই আবাসন প্রকল্পের নাম ‘১০ নম্বর আউটফল স্টাফ কোয়ার্টার’। প্রায় ৯০ কাঠা জমির ওপর অবস্থিত এই প্রকল্পে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মকর্তারা বসবাস করে আসছিলেন। সেখানে ২৩টি ভবনে ১৮০টি ফ্ল্যাট রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১১৫টি ফ্ল্যাটে করপোরেশনের কর্মীরা বসবাস করছেন। আর চাকরি শেষ হওয়ার কারণে ৬৫টি পরিবার চলে যাওয়ায় ওই ফ্ল্যাটগুলো তালাবদ্ধ ছিল। এসব ফ্ল্যাটের প্রতিটিতে তিনটি শয়নকক্ষ, দুটি শৌচাগার, একটি রান্নাঘর ও একটি স্নানঘর রয়েছে।

সেখানকার তিনজন বাসিন্দা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কর্মী হিসেবে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন, এমন অনেকে এসব ফ্ল্যাটে উঠেছেন। এসব ব্যক্তির মধ্যে যাঁদের স্বজনেরা ঢাকায় থাকেন, তাঁদের এনেও ফ্ল্যাটে তোলা হয়েছে। আবার সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী কর্মীদের কেউ কেউ এসব ফ্ল্যাট দখল করে ভাড়া দিয়েছেন।

এই আবাসনের একটি ফ্ল্যাটে থাকেন ঢাকা দক্ষিণ সিটির পরিবহন শাখার কর্মচারী বাতেন মিয়া। গত ২১ জানুয়ারি ফ্ল্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, করপোরেশনের ভবনে থাকার কারণে প্রতি মাসে তাঁর বেতন থেকে ২০ হাজার টাকা কেটে নেওয়া হচ্ছে। অথচ বহিরাগত লোকজন বিনা মূল্যে এসব ফ্ল্যাটে উঠেছেন। তাঁরা সেখানে আসার পর পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে।

এসব দখলদারকে সরাতে গত বছরের অক্টোবরে সেখানে বৈধভাবে বসবাসকারী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে তাঁরা উল্লেখ করেছেন, বহিরাগত লোকজন এসে এসব ফ্ল্যাট দখল করার কারণে তাঁরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বহিরাগতদের অনেকে সেখানে থেকে মাদক ব্যবসাও শুরু করছেন।

নিজাম ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মচারী কি না, তা তিনি জানেন না। নিজামের মুঠোফোন নম্বর চাইলে ওই নারী বলেন, তাঁর শ্বশুর ও ভাশুর একসময় সিটি করপোরেশনে চাকরি করতেন। ফ্ল্যাট খালি শুনে তাঁরা এখানে এসে উঠেছেন।

বহিরাগতদের ভাষ্য

বহিরাগত ব্যক্তিদের মধ্যে সম্প্রতি যাঁরা ফ্ল্যাটে উঠেছেন, এমন কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। এর মধ্যে ৭–এর খ ফ্ল্যাটে দরজায় কড়া নাড়ার পর এক নারী এসে হাজির হন। তাঁর কাছে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক জানতে চান, ফ্ল্যাটটি কার নামে বরাদ্দ? জবাবে তিনি বলেন, তাঁরা ৫ আগস্টের পর এই ফ্ল্যাট ১০ হাজার টাকায় নিজাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন। নিজাম ঢাকা দক্ষিণ সিটির কর্মচারী কি না, তা তিনি জানেন না। নিজামের মুঠোফোন নম্বর চাইলে ওই নারী বলেন, তাঁর শ্বশুর ও ভাশুর একসময় সিটি করপোরেশনে চাকরি করতেন। ফ্ল্যাট খালি শুনে তাঁরা এখানে এসে উঠেছেন।

৫ নম্বর ভবনের খ নম্বর ফ্ল্যাটে গিয়ে কথা হয় আমির হোসেন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ফ্ল্যাটে কীভাবে থাকেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাঁর মা একসময় সিটি করপোরেশনে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন। ফ্ল্যাট খালি পড়ে আছে শুনে তাঁরা এসে উঠেছেন। সিটি করপোরেশন বললে ছেড়ে দেবেন।

সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কোনো বাহিনী নেই। উচ্ছেদ করতে হলে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়। করপোরেশনের বর্তমানে প্রশাসকও নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নানা জটিলতার কারণে তাঁরা দখলদারদের সরাতে পারছেন না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী

উদ্যোগ নেবে করপোরেশন

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটির সম্পত্তি বিভাগের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব দখলদারকে সরাতে তাঁরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু কিছুই পারছেন না। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, করপোরেশনের প্রশাসক নেই, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নেই। ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে নানা পক্ষের উৎপাতে বিভিন্ন বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারাও ঠিকমতো অফিস করতে পারছেন না।

এই আবাসনে বসবাসকারী বৈধ বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অবৈধভাবে যাঁরা ফ্ল্যাট দখল করেছেন, তাঁদের বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির বিলও দিতে হচ্ছে না। এসব টাকা সিটি করপোরেশনকে বহন করতে হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুরোনো এসব ভবন ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় ২০২২ সালে ফ্ল্যাটগুলো খালি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ কারণে সেখানে বসবাসকারীদের মধ্যে যাঁদের চাকরি শেষ হয়েছে, তাঁরা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর নতুন করে আর কাউকে বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তিন বছর আগে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হলেও সেখানে নতুন কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়নি।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা কাইজার মোহাম্মদ ফারাবী প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের নিজস্ব কোনো বাহিনী নেই। উচ্ছেদ করতে হলে পুলিশের দ্বারস্থ হতে হয়। করপোরেশনের বর্তমানে প্রশাসকও নেই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নানা জটিলতার কারণে তাঁরা দখলদারদের সরাতে পারছেন না। তবে এসব দখলদারকে সরাতে শিগগিরই উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।