করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই নতুন সংকট রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিপর্যস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। যার রেশ পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও। মাত্রাতিরিক্ত ঋণ, বৈদেশিক বাণিজ্যে ক্ষতি, পর্যটনে ভাটা আর রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাওয়া এ অঞ্চলের দেশগুলোকে সংকটে ফেলেছে। বিশেষ করে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও নেপালের অবস্থা সংকটপূর্ণ।
তবে আশার কথা করোনাকালের দুরবস্থা পেছনে ফেলে ঘুরে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। বর্তমান সরকার টানা তিন মেয়াদে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। গত ১৩ বছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ইতিবাচক। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান। বিশ্বের সবচেয়ে অগ্রসরমান দেশগুলোর তালিকায়ও বাংলাদেশ রয়েছে। এমনকি করোনার মধ্যেও বাংলাদেশ অর্থনীতিকে ভালোভাবে সামাল দিয়েছে বলেই মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।
বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্যপণ্যে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছে। এজন্য আগামীতে আবাসন ব্যবসায়ীদের আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ করে এগিয়ে যেতে হবে। মাঝপথে প্রকল্প থেমে রাখার পরিবর্তে কম পরিমাণে প্রকল্প নিয়ে শেষ করার দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
সাম্প্রতিক সময়ে শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে নানারকম চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সংকট দানা বেঁধে উঠছে এবং বিশ্ব একটি অর্থনৈতিক সংকটের গহ্বরের মধ্যে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বলে কোনো কোনো অর্থনীতিবিদ মনে করেন।
অর্থনৈতিক সংকটের আঁচ ইতোমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। জিনিসপত্রের দাম হু হু করে বাড়ছে, ডলারের বাজার অস্থির হয়ে গেছে। সামনের দিনগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর সে কারণেই অর্থনীতির যে শঙ্কার কালোমেঘের জমা হচ্ছে সেগুলোকে খুব নজরে রাখতে হবে এবং এই অস্বস্তির জায়গাগুলোকে দ্রুত দূর করতে সরকারকে এখনই তৎপর হতে হবে।
মহামারি করোনার দুটি ধাক্কায় একেবারে বিপর্যস্ত করে দেয় আবাসন শিল্পকে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থের বিনাপ্রশ্নে ব্যবহারের সুযোগ এবং নিবন্ধন ব্যয় কমানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপে অনেকটা আশার আলো দেখে আবাসন খাত। কিন্তু পরে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের বিষয়ে অস্পষ্টতা এবং নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিতে বড় ধরনের সংকট তৈরি হয়েছে এই খাতে।
আগামী ৯ জুন ঘোষিত হবে ২০২২-২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট। চলতি অর্থবছরের প্রায় পুরোটাই নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে সংকটের মধ্য দিয়ে চলছে আবাসন ব্যবসা। অনেকটা কমে গেছে নির্মাণ কর্মকাণ্ড। আমাকে রিহ্যাব GCV বেশ কিছু সদস্য প্রতিষ্ঠানের মালিকরা জানিয়েছেন। নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রতি বর্গফুট ফ্ল্যাটের দাম বেড়েছে প্রায় ৮০০ টাকা। অথচ যখন একজন ডেভেলপার কোনো ল্যান্ড ওনারের সঙ্গে চুক্তি করেন তখন বছরে ৫-১০ শতাংশ মূল্যবৃদ্ধির চিন্তা করে প্রতি বর্গফুটের দাম নির্ধারণ করেন। সেভাবেই তারা ফ্ল্যাটের বুকিং নেন। যখন ভয়ংকরভাবে নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বেড়ে যায়, তখন কী যে অবস্থা হয়, তা ভুক্তভোগী ডেভেলপাররাই বুঝতে পারেন। রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীরা এখন বড় ধরনের বিপাকে আছেন। এই খাতকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে এখন সরকারের সুদৃষ্টি ছাড়া কোনো উপায় নেই।
জিডিপিতে ১৫ শতাংশ অবদান রাখা এই খাতে সরকারকে দ্রুত কার্যকর নজর দিতে হবে। আবাসন খাত থেকে সরকার ট্যাক্স, ভ্যাট, রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ প্রচুর রাজস্ব পায়। এ খাত ক্ষতিগ্রস্ত হলে দেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। অর্থনীতিতে গতি আনতে হলে অবশ্যই আবাসন খাতে গতি আনতে হবে। সমগ্র নির্মাণ খাতে প্রায় ৫০ লাখ শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। তাদের ওপর নির্ভর করেই প্রায় আড়াই কোটি নাগরিকের অন্ন-বস্ত্র চাহিদা পূরণ হয়। এই খাতকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয় বিশাল কর্মযজ্ঞ। আসন্ন জাতীয় বাজেটে বিনা প্রশ্নে বিনিয়োগের বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে। সবচেয়ে বড় প্রয়োজন নাগরিকদের জন্য ফ্ল্যাট ক্রয় করার জন্য একটি চক্রাকার তহবিল গঠন। আসন্ন জাতীয় বাজেটে সরকার এই বিষয়গুলোর দিকে গুরুত্বের সাথে নজর দেবে সেই প্রত্যাশা করছেন আবাসন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা।
ডেভেলপারদের করণীয়: বৈশ্বিক অর্থনীতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ীদের। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের সংকট তৈরি করেছে। দেশে দেশে ডলার মূল্যবৃদ্ধিতে সংকটে পড়েছে বিভিন্ন দেশের অর্থনীতি। সংকট মোকাবিলায় আমাদের বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার অবমূল্যায়ন করেছে। যার জন্য আমাদের আমদানিনির্ভর লিংকেজ শিল্পের বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।
ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে খাদ্যপণ্যে ব্যাপক মূল্যস্ফীতি তৈরি হয়েছে। এজন্য আগামীতে আবাসন ব্যবসায়ীদের আবাসন প্রকল্প গ্রহণ করার ক্ষেত্রে হিসাব-নিকাশ করে এগিয়ে যেতে হবে। মাঝপথে প্রকল্প থেমে রাখার পরিবর্তে কম পরিমাণে প্রকল্প নিয়ে শেষ করার দিকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
লেখক: ভাইস প্রেসিডেন্ট (প্রথম), রিহ্যাব। জাগোনিউজ২৪