দেশে গৃহঋণের বিশেষায়িত সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। গৃহঋণ দেওয়াই এই সংস্থার মূল কাজ। এই সংস্থার ঋণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, সুদ সবচেয়ে কম এবং সরল সুদ। অর্থাৎ সুদের ওপর সুদ নেই। অন্যদের সুদ চক্রবৃদ্ধি হারে।
বিএইচবিএফসির সুদও কম, কৃষকদের জন্য ৭ শতাংশ। আর ফ্ল্যাট ও বাড়ি নির্মাণে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ। অন্যদিকে সর্বোচ্চ মেয়াদের জন্য ঋণ নেওয়া যায়। একেবারে ২৫ বছর পর্যন্ত।
বিএইচবিএফসি থেকে ঋণ নিয়ে বাড়ি নির্মাণ করতে চাইলে সাধারণত ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টাকা নিজের থাকতে হয়। অর্থাৎ ১ কোটি টাকার ঋণ প্রকল্পের জন্য ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয়। বাকি ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা গ্রাহকের নিজের থাকতে হয়।
বিএইচবিএফসি প্রধানত ঋণ দেয় বাড়ি নির্মাণে। ফ্ল্যাট কেনার ঋণ দিতে সংস্থাটি কিছুটা রক্ষণশীল। সরকারি কর্মচারীদের ক্ষেত্রে অবশ্য ব্যতিক্রম। তাঁদের ফ্ল্যাট কেনায়ও ঋণ দেওয়া হয়। বিএইচবিএফসি ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের অভিজাত এলাকায় বাড়ি নির্মাণে একক ব্যক্তিকে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দিয়ে থাকে।
বাড়ি নির্মাণ ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত ১১ ধরনের ঋণ দেয় বিএইচবিএফসি। যেমন জিরো ইক্যুইটি আবাসন ঋণ, নগর বন্ধু, প্রবাস বন্ধু, পল্লীমা, কৃষক আবাসন ঋণ, আবাসন মেরামত, আবাসন উন্নয়ন, ফ্ল্যাট ঋণ, ফ্ল্যাট নিবন্ধন ঋণ, হাউজিং ইকুইপমেন্ট ক্রয় ঋণ এবং সরকারি কর্মচারীদের জন্য গৃহ নির্মাণ ও ফ্ল্যাট ঋণ।
বিএইচবিএফসির ঋণের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে আরও রয়েছে ওয়ান স্টপ সার্ভিস সুবিধা। এখন কাগজপত্র তৈরি করতেও সহায়তা করা হয়। এ ছাড়া কোনো লুক্কায়িত মাশুল (চার্জ) নেই। কেউ চাইলে আগে কিস্তি দিতে পারেন, যে জন্য কোনো অতিরিক্ত মাশুল গুনতে হয় না।
বিএইচবিএফসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অরুণ কুমার চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের ঋণপণ্য আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে, কাজকর্মও স্বচ্ছ। সংস্থার প্রয়াত ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তীর দেখানো পথে বিএইচবিএফসিকে আমরা মর্যাদাশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে বদ্ধপরিকর।’
জিরো ইকুইটি আবাসন ঋণ
এই ঋণ পেতে বিভাগীয়, জেলা, উপজেলা সদর ও গ্রোথ সেন্টারে অন্তত ৪ শতাংশ নিষ্কণ্টক জমি থাকতে হয়। এককভাবে বা স্বামী-স্ত্রীর নামে যৌথভাবে নেওয়া যায়। বাড়ি হবে ৬০০ থেকে ৯০০ বর্গফুটের। সুদের হার ৭ থেকে ৮ শতাংশ। ঋণ নেওয়া যাবে ৫ থেকে ২০ বছর মেয়াদে।
নগর বন্ধু
ঢাকার গুলশান, বনানী ও চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, খুলশী ইত্যাদি এলাকায় বাড়ি নির্মাণে এককভাবে দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়া হয় ৯ শতাংশ সুদে। গ্রুপভিত্তিক আবেদনে ঋণ আরও বেশিও মেলে। ঋণ পেতে ২০ শতাংশ অর্থ গ্রাহকের থাকতে হবে।
প্রবাস বন্ধু
প্রবাসীরা দুই কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাবেন ঢাকা ও চট্টগ্রামের অভিজাত এলাকায় বাড়ি নির্মাণে। ওই দুই সিটি করপোরেশনের অন্য এলাকায় পাবেন এক কোটি টাকা পর্যন্ত। এ ছাড়া বিভাগীয় ও জেলা সদরে ৬০ লাখ এবং উপজেলা সদর ও পেরি আরবান অঞ্চলে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ মিলবে। সুদের হার ৮ থেকে ৯ শতাংশ। তাদের ফ্ল্যাট কেনার ঋণ অভিজাত এলাকায় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
পল্লি আবাসন
এর আওতায় বাড়ি নির্মাণে এককভাবে বিভাগীয় ও জেলা সদরে ৮ শতাংশ সুদে পাওয়া যায় ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। উপজেলা সদরে পাওয়া যায় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর গ্রুপভিত্তিক ঋণ নিলে গ্রুপের সদস্যরা পাবেন ৪০ লাখ টাকা করে ঋণ। ফ্ল্যাট ঋণের সুদ অবশ্য ৯ শতাংশ।
কৃষক আবাসন
এর আওতায় গ্রাম এলাকায় ঋণ পাওয়া যাবে একক নামে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত। সুদ ৭ শতাংশ। গ্রুপে পাওয়া যাবে ২০ লাখ টাকা করে। ৫ থেকে ২৫ বছর মেয়াদে নেওয়া যাবে এই ঋণ।
আবাসন মেরামত
এ জন্য ঋণ পাওয়া যাবে ঢাকা ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ৯ শতাংশ সুদে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। অন্য এলাকায় ৮ শতাংশ সুদে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। এই ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ৫ থেকে ১০ বছর।
ফ্ল্যাট ঋণ
এলাকা ভেদে এই ঋণ দেওয়া হয় ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত। সুদের হার সব ক্ষেত্রেই ৯ শতাংশ। এই ঋণ পেতে নিজের থাকতে হবে ২৫ শতাংশ টাকা। ৫ থেকে ২৫ বছর মেয়াদে ঋণ নেওয়া যাবে। প্রথম আলো